সদ্য চলে যাওয়া প্রিয় মানুষ অমিতাভ মৈত্রকে নিয়ে লিখতে গেলে স্মৃতির ঘরের শিকলটা প্রথমে হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেলতে হবে। তবে এমন কিছু ঝুল ঝাড়াঝাড়ি করতে হবে না। কেননা সব স্মৃতিই উজ্জ্বল। সবটা বলতে গেলে হিসেব নিকেশের ঊর্ধ্বে উঠে বলতে হবে। কারণ আমাদের কথারই বসবাস ছিল এককালে। আর আমরা তো সবাই জানি কথা হল সাগর, কথাসাগর। সেই সাগরপারের বালিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঝিনুকগুলি যেন কবিতা। জীবিত অবস্থায় অমিতাভদাকে নিয়ে লিখতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু আমাদের দেশে লেখকদের মৃত্যুর পরই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। পরে সময়ই বলে দেয় মহাকালের খাতায় তাঁর নাম থাকবে কি না।
আমি যে সময়ে আক্ষরিক অর্থে প্রকাশ্যে লেখালেখি শুরু করেছিলাম, সে সময়ে পছন্দমতো বইপত্র শিলিগুড়িতে পাওয়া যেত না। এখন পাওয়া গেলেও কলেজস্ট্রিট থেকেই কেনা অভ্যেস হয়ে গেছে। এছাড়া অনলাইন এখন আমাদের জীবনে এক বড় সহযোগ। আগে বইপাড়ার তেমন কাউকে চিনতামও না। চিনলেও গল্প জমাতাম না। দেখতাম দুচোখ মেলে। আসলে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষদের কলকাতাতে কাজ ছাড়া ঠিক পোষায় না। যতই সুযোগ সুবিধা থাকুক না কেন। তাই বলে কি ওইদিকটায় বন্ধু নেই! আছে প্রচুর। সেই সময়ে কলকাতার বাইরের মানুষ অমৃতলোকের সমীরণ মজুমদার নানান রকম তথ্য দিয়ে কলকাতা ও সেখানকার মানুষজনকে চেনানোর চেষ্টা করেছেন। আর ছিলেন আমার আরও এক প্রিয় কবি উৎপলকুমার বসু। প্রথম চিনিয়েছেন কফিহাউস। খাইয়েছেন প্রথম দিন আফগান কাটলেট। ওঁর সঙ্গেও প্রচুর স্মৃতি জড়িয়ে। উৎপলদাকে নিয়ে আমার লেখা হয়নি কখনও। আসলে সব ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম তো থাকেই। ছিলও।
শিলিগুড়িতে তপন মজুমদারের ‘বুকস’ ছিল স্থানীয় লেখকদের আড্ডাখানা। বাইরে থেকে লেখকেরা কেউ এলেও ওই বুকসে গপ্পোটপ্পো হত। সেখানে আলোচনা সমালোচনা সবই প্রকাশ্যে চলত। সামনে প্রশংসা করা, পেছন ফিরলেই তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বক্রোক্তি, এমনকি তার ব্যক্তিগত পরিসর টেনেও চোখ টিপে হাসাহাসি হত! এসব আমি নিজে দেখেছি। শিকারও হয়েছি কখনও বা। অনেকেই কলকাতা থেকে পছন্দের বইপত্র আনতে দিতেন তপনদার কাছে। আমি আলাদাভাবে কোনদিনই বইপত্র আনাইনি। তবে ‘কবিতা পাক্ষিক’, ‘ভাষাবন্ধন’ এমন কিছু কাগজের সন্ধান আমি সেখানেই পাই। লেখা পাঠাই। ছাপাও হয়। তারপর কালের নিয়মেই পা লম্বা হয়। স্ফীত হয় জিগীষা এবং আত্মজিজ্ঞাসা। কলকাতা যাই। ততদিনে আমি পাতিরাম জেনে গেছি। বইপাড়া জেনে গেছি। প্রথম যেবার বইমেলা গেলাম, সেবার তেমন ঘোরা হয়নি। কিন্তু পরিচয় ঘটেছিল অনেকের সঙ্গেই। সেই ‘কবিতা পাক্ষিক’ পরিবারের সঙ্গে বইমেলায় পরিচয়। প্রভাতদা, নাসেরদা, মুরারীদা, গৌরাঙ্গদা, ঠাকুরদাস রজতেন্দ্র এবং বৌদিরা। যেন এক যৌথ পরিবারের দ্বিপ্রাহরিক আড্ডা। সুমিতেশ অর্থাৎ অকালপ্রয়াত কবি সুমিতেশ সরকারকেও সেখানেই পাই। পরবর্তীতে ও আমার পছন্দের বন্ধুদের একজন হয়ে উঠেছিল। পরের বছর আমার দ্বিতীয়বার কলকাতা বইমেলা। ময়দান। টিকিট কাটতে হত সে সময়ে।
কবিতা পাক্ষিকের স্টলে প্রভাত চৌধুরী, আমাদের প্রভাতদা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন অমিতাভ মৈত্রর সঙ্গে। প্রভাতদাকে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এক ছত্রছায়ায় কবিদের মেলবন্ধন ঘটাতে ভালোবাসতেন। সেখানেই অমিতাভ মৈত্রের সঙ্গে পরিচয়ের শুরু এবং ওই পর্যন্তই। তার আগে আবশ্য কবিতা পাক্ষিকের পাতায় ওঁর লেখা পড়েছি। ভালো লাগত, ভেতরে একটা আন্দোলন হত কিন্তু তেমন করে ছুঁতে পারতাম না। অদ্ভুত আশ্চর্যজনক সেইসব লেখা। তখন পড়াশুনার পরিধিও কম ছিল। নানান ধরনের বৈচিত্রময় কবিতা পড়ার সুযোগও হয়ে ওঠেনি তেমনভাবে! বাজার চলতি কবিতাই পড়া হত বেশি।
কবিতা পাক্ষিক আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং মোড়। বাঁক বলব না। প্রচুর বিখ্যাত কবি, লেখক, সম্পাদকদের সঙ্গে সেই পাক্ষিকের ছাদের নীচে আলাপ হয়। চেনাচেনি হয়। বন্ধু, শত্রু সবটাই! কেউ কেউ বন্ধুবৃত্তে রইলেন। কেউ কেউ দূরে সরে গেলেন। কিংবা আমি সরে গেলাম। এটাই স্বাভাবিক। সবাই তো বন্ধু হয় না। একেক জনের একেক রকম মত। ঠাকুর বলেছেন, “যত মত, তত পথ।” একেক জন একেক পথের পথিক। যে যার পথকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য দল তৈরি করেন। আমার আবার দলাদলি না-পসন্দ। এই সমস্ত কিছুর মধ্যমণি কিন্তু সাহিত্যের একটি বিমূর্ত শাখা ‘কবিতা’। যার জন্য এত কিছু, যার জন্য কবিতামহলে মান অভিমান, সেই কবিতা অবশ্য নির্জনতা দাবি করে। একাকিত্ব, হাহাকার, বেদনা কবিতাকে মর্মে মর্মে লালন করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। এই সমস্ত বোধ এবং অবোধের মাঝখানে আন্দোলিত হচ্ছি, ভেতরে ভেতরে টানাপোড়েনের যন্ত্রণা যাপন করছি, আবার লিখছিও। তখনও অমিতাভ মৈত্রর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। কোথায় থাকতেন তাও জানতাম না।
কোচবিহারে একবার কবিতা পাক্ষিকের একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। ঠিকঠাক সালটা মনে নেই। সেই অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে প্রভাতদারাও এসেছিলেন। আমি শিলিগুড়ি থেকে আমন্ত্রিত ছিলাম। অমিতাভ মৈত্র এসেছিলেন জলপাইগুড়ি থেকে। সুবীর সরকার ছিলেন অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্বে। যদিও সেই অনুষ্ঠানটির শেষ রক্ষা হয়নি। সে অন্য প্রসঙ্গ!
কোচবিহারেই ঘটল অসমবয়সি বন্ধুত্বর সূত্রপাত। তারপর প্রভাতদাদের সেই যাত্রাতেই জলপাইগুড়িতে কবিতা পাক্ষিকের আরও একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানেও আমি শিলিগুড়ি থেকে গেলাম। অনিন্দিতা গুপ্তরায়, সৌমনা দাশগুপ্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কবিবন্ধুদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল। খুব সম্ভবত সেই বছরেই জলপাইগুড়ি বইমেলা থেকে আমার প্রথম বই ‘মেঘবন্দি’ কিনে চমকে দিয়েছিলেন অমিতাভদা। তখন ল্যান্ডলাইনের যুগ। মুঠোফোন ঢুকব ঢুকব করছে। টেলিফোনে সেই সময়ে খুব কথা হত অমিতাভদার সঙ্গে। কথার চাইতেও হত বেশি একে অপরকে কবিতা শোনানো। কবিতা যখন শুনতেন তখন নাকি উনি চোখ বন্ধ করে কবিতা দেখতেন। তখনও অমিতাভদার সাক্ষাৎকার কোথাও পড়িনি। পরবর্তীকালে অমিতাভ মৈত্র এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “কবিতা আমার কাছে ভিসুয়ালি আসে। টুকরো একটা দৃশ্য-বাস্তব, পরাবাস্তব যেমনই হোক না সে হঠাৎ করে চোখে দেখতে পাওয়ার মতো প্রাণবন্ত হয়ে আসে। মুহূর্তে মুছে যায় সেটা। এরপরে হয়তো সম্পূর্ণ অন্যরকম আর একটি বা কয়েকটি দৃশ্য। এই দৃশ্যগুলোকে মিলিয়ে, কেটে, জুড়ে একটা চাপা শৃঙ্খলা প্রবাহিত করে দেওয়ার চেষ্টা করি তাদের মধ্যে। কিছু একটা, কোথাও একটা রণন তৈরি করার চেষ্টা। আমি তো এইটুকুই পারি।”
কী অদ্ভুত অন্যরকম ভাবনা! তাই না পাঠক?
জলপাইগুড়িতে থাকাকালীন বলতেন, প্রবীর রায়ের লেখা ওঁর খুব পছন্দ। বলতেন, “সবাই যেভাবে কবিতা লেখেন, আমি তার বিপরীত দিক থেকে লেখা শুরু করি। কবিতার প্রচলিত ধারণাকে অস্বীকার করতে চেষ্টা করি।” অথচ দেখুন কারুর অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই অমিতাভ মৈত্রকে। এখানেই মনে হয় সৃষ্টি জিতে যায়।
আমাদের বাড়ি চলে আসতেন কাজে এবং অকাজেও। ধীরে ধীরে সেই সময়েই আমার একটু একটু করে ম্যাডাম এমকে চেনা। কীভাবে সি আর পি সি ভাষ্য হল তার প্রেক্ষিত জানা। এরকমভাবে চলতে চলতে কখন যেন অমিতাভদা আমাদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠলেন। ২০১৫-তে বৈখরী ভাষ্য অমিতাভ মৈত্রর ‘টোটেম ভোজ’ পুনঃপ্রকাশ করেছিল। বইটি নিয়ে শিলিগুড়িতে আলোড়ন পড়েছিল। পদ্যর টেবিল থেকে দুটো টোটেম চুরিও হয়েছিল! আমি টোটেম ভোজ পাই পুরনো সংস্করণে। টোটেমের জন্মকথাগুলি কবির জীবন অভিজ্ঞতা থেকেই উঠে আসা সেকথা কবি নিজমুখেই বলেছেন। একটি সাক্ষাৎকারে লিখিতরূপে পরে জানতে পারি, টোটেম ভোজ বইটির ১০০ মাইলের মধ্যে যেন কবিতা না থাকে এটা ছিল আমার প্রথম ভাবনা। কেননা যে angst-এর ভেতর দিয়ে তখন আমার দিন যেত, তা কবিতা সহায়ক নয়। কবি এখানে নিজে বলেছেন, টোটেম একটি বিষবমি। কোনও সাহিত্য নয়। কেউ পড়বে এটা আমি ভাবিইনি। ভাষা যেন ভদ্রতা করছে ফর্মাল দূরত্ব রেখে।
প্রথম বই ‘বিদ্ধ করো, তীর’ রয়েছে আমার সংগ্রহে। সেটি ১৯৮৬-তে প্রকাশিত। বিদ্ধ করো, তীরের কবিতাগুলি ছোট ছোট পঙ্ক্তিতে লেখা ছন্দে মোড়া একেবারে কনভেনশনাল।
কিছুদিনের মধ্যেই অমিতাভদার এসে গেল বদলি পর্ব। ঘাটাল। নব্বইয়ে সব দিক দিয়ে জীবনে আলোড়ন ঘটে। প্রযুক্তি পৃথিবীকে অনেক ছোট করে দেয়। যে যেখানেই থাকুন, ইচ্ছে থাকলে যোগাযোগ থাকে। আর তখন বাজারে মুঠোফোন এসে গেছে। আমার ছেলে মেয়ে ঘাটাল থেকে G তুলে নিয়ে জি-আঙ্কেল বলে সম্বোধন করত। অমিতাভদার স্নেহও ওরা পেয়েছিল। পরের দিকে আবার বদলি হয়ে রায়গঞ্জ এসেছিলেন। স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে আমাদের শিলিগুড়ির বাড়িতে এসেছিলেন কোনও খবর না দিয়ে। মনে আছে সবাই মিলে আমরা সে দিনটা খুব আনন্দে কাটিয়েছিলাম।
দু-তিনটি সংখ্যা বাদে ‘পদ্য’র প্রতি সংখ্যাতে লিখেছেন। গদ্য এবং কবিতা নিয়মিত। একবার টেলিফোনেও কবিতা নিয়েছিলাম। পদ্যর প্রচ্ছদ করেছেন চার-পাঁচবার। দেশি, বিদেশি কত ছবি আমাকে পড়িয়েছেন। অমিতাভদার জন্যই আমার ছবির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ছবি নিয়ে পদ্যতে কয়েকবার কাজ করেছি। মৃণাল ঘোষ লিখতেন। ওঁর কন্যা সুমনা ঘোষও প্রচ্ছদ করেছেন দুবার পদ্যতে। সুমনার ছবি প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতা একবার গিয়েছিলাম।
যেখানেই থাকুন না কেন এত গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেও পদ্যর সব অনুষ্ঠানে এসেছেন শিলিগুড়ি। কত কাণ্ডই না করেছি কবিতা নিয়ে অপরিণত আবেগের বশে! আর অগ্রজরা সমর্থনও করতেন! শুরুর দিকে ‘পদ্য’ পত্রিকার পক্ষ থেকে ‘পদ্যসম্মান’ দেওয়া হত। বেশ ক-বার অর্থমূল্যও দেওয়া হয়েছে। রেডিওতে কাজ করবার সুবাদে একবার রেডিওতে স্লট কিনে অনুষ্ঠান করলাম। আকাশবাণীর স্টুডিওতে রেকর্ডিং হল। সমীরণ ঘোষ (মালবাজার)-কে সে বছর ‘পদ্যসম্মান’ দেওয়া হয়। কবিতা কথায় জমে উঠেছিল অনুষ্ঠান। সম্প্রচার হল। সেই অনুষ্ঠানেও অমিতাভদা এসেছিলেন। এসেছিলেন নীরদ রায়, সমীরণ ঘোষ, সমর চক্রবর্তী, হরেন ঘোষ এবং আরও কেউ কেউ। অবসরের পরও প্রথম প্রথম শিলিগুড়ি আসেন। পরের দিকে একটু একটু করে নিজেকে গুটিয়ে নেন। টেলিফোনে যোগাযোগ ছিল। পদ্যর গত সংখ্যা অর্থাৎ আর্তি সংখ্যাতেও গদ্য লিখেছেন। অমিতাভদার শিলিগুড়িতে আড্ডাগলি আসবার খুব ইচ্ছে ছিল। কথাবার্তাও হল। কিন্তু করোনা ভাইরাস সে সুখ থেকে বঞ্চিত করল। পরের দিকে আর বহরমপুর থেকে বের হতেন না তেমন। আসলে চাকরি জীবনে ফরমায়েশি লেখা লিখেছেন। খুব বেশি মনের মতো লেখা লিখতে পারেননি বলে অবসরের পর লেখায় আর প্রকাশে নিমগ্ন ছিলেন। কথাও ধীরে কমতে থাকে। তবে মানসিক দূরত্ব কি কমে! কমে না! কত লেখা শেষ দিকে ছবি তুলে পাঠাতেন। শেষের কয়েক বছর আকাদেমির আমন্ত্রণেও আসতেন না। বলতেন, শরীর দেয় না। সিওপিডি ছিল। বরাবর ইনহেলার নিতে দেখেছি। নাতনির ছবি খুব পাঠাতেন হোয়াটসঅ্যাপে। বুঝতে পারতাম নাতনি ওঁর অত্যন্ত আদরের জায়গা। কবিসম্মেলন আমার প্রিয় পত্রিকা। জন্ম দেখেছি ওর। প্রচুর প্রশ্রয় পেয়েছি এখানে। আশা রাখি আরও পাব যদি লেখায় থাকি। অমিতাভদা লিখতে লিখতে চলে গেলেন। সম্পূর্ণভাবে নিজেকে লেখায় রেখেছিলেন। কাজেই ওঁর লেখা কাটাছেঁড়া করে পোস্টমর্টেম করতে আমার হাত কাঁপবে। তোলা থাক ভাবীকালের কোনও বিদগ্ধ আলোচকের জন্য। আমি অনুভব করে উপলব্ধিটুকু জানাতে পারি। এর বেশি পারি না। আচরণে অপ্রকাশিত থাকলেও শিশুর মতো সারল্য লালন করতেন স্বভাবে। স্নেহপ্রবণ ছিলেন। হয়তো সুবক্তা ছিলেন না, কিন্তু গল্প করতে পারতেন। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে গতায়াত ছিল সাবলীল। অমিতাভদার মেধাবী গদ্য পাঠককে মুগ্ধ করে। পুরনো দিনের বহু কথা আজ চোখের সামনে ছবি হয়ে ভাসছে। থাকুক ছবিরা তার নিজস্ব অ্যালবামে।
ত্রিপুরার স্রোত প্রকাশনা ২০১৮ সালে আমার একটি রোগা কবিতার বই করেছিল। নাম ‘প্রেমের মতো’। সেই বইটির প্রচ্ছদ শিল্পী অমিতাভ মৈত্র। কিছুই থাকে না জীবনে, প্রবাহে সব ভেসে যায়। পরক্ষণেই আবার মনে হয় সত্যিই কি সবকিছুই বিলীন হয়ে যায় অন্ধকারে। শূন্যের যে অসীম ক্ষমতা। কিছুই সে হারাতে দেয় না। ধারণ করতে পারে মনে হয়। অমিতাভ মৈত্রর চলে যাবার খবর সমাজমাধ্যমেই প্রথমে দেখি। তারপর ফোনে এদিক সেদিক কথা হয়। আমাদের বাড়ির পরিবেশ সেদিনটা ছিল থমথমে। মেয়ে ব্যাঙ্গালোর থাকে। তাকে জানালাম। ও কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভিডিও কল থেকে অফলাইন হল। কিছু সম্পর্কের জোর এমনই যে তা মৌন করে দেয়। ঠিক যেন আপন হতে বাহির করে বাইরে দাঁড় করিয়ে দেয় নীরবে।
নিবন্ধটি কবিসম্মেলন পত্রিকার মার্চ ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত। সংখ্যাটি পাওয়া যাচ্ছে এখানে।
Leave a Reply